কৃষক মোর্চার দায়িত্ব থেকে সাময়িক সরলেন যোগেন্দ্র যাদব

কল্যাণ সেনগুপ্ত
লিখেছেন কল্যাণ সেনগুপ্ত পড়ার সময় 4

কল্যাণ সেনগুপ্ত

সবাইকে বুঝতে হবে, বিরোধী ঐক্যকে সংহত করতে হলে এবং বিকল্প সরকারকে সদর্থক দিশায় পরিচালিত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি শক্ত খুঁটির। এই যাত্রা সফলভাবে শেষ হলে কংগ্রেস দল সেই কাঙ্খিত খুঁটিরূপে আবির্ভূত হবে। অতঃপর সেই খুঁটিকে ঘিরেই গড়ে উঠবে এক শক্তপোক্ত বিরোধী শিবির। সেই কারণেই নিছক কংগ্রেসের স্বার্থে নয়, জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে এবং সময়ের ডাকে সমস্ত সামাজিক সংগঠনগুলি এই যাত্রাকে সহযোগিতা ও সমর্থন করতে সম্মত হয়েছে…”

জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে ‘সংযুক্ত কৃষক মোর্চা’ থেকে অন্যতম প্রধান মুখ যোগেন্দ্র যাদব সাময়িক বিরতি নিলেন। তিনি ছিলেন মোর্চায় জয় কিষান আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং তাঁর পরিবর্তে ঐ গুরুদায়িত্বের ভার নিলেন যোগেন্দ্র যাদবের অন্যতম সহযোগী ও অতি নির্ভরযোগ্য এবং কৃষক আন্দোলনের অভিজ্ঞ ও প্রারম্ভের সাথী বাংলার অভীক সাহা। তিনি ‘সংযুক্ত কৃষক মোর্চা’-র অতীব গুরুত্বপূর্ণ ড্রাফট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বপ্রাপ্তও হয়েছেন। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কেন এই রদবদল? এর সহজ ও নির্ভেজাল উত্তর হচ্ছে – জাতীয় রাজনীতির তাগিদে। তবে এর জন্য কিছুটা আলোচনার প্রয়োজন।

ইতিমধ্যেই সকলেই জানেন যে, রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ ৭ সেপ্টেম্বর. কন্যাকুমারিকা থেকে শুরু হয়েছে, যাবে কাশ্মীর পর্যন্ত। প্রায় ৩৫৭০ কিলোমিটার লম্বা এই যাত্রা চলবে প্রায় পাঁচ মাস ধরে। এই যাত্রা কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে শুরু হলেও এর সমর্থনে এগিয়ে এসেছে দেশের প্রায় দেড়শো সক্রিয় সামাজিক সংগঠন। গত ২২ আগস্ট দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে এবিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যার উদ্যোক্তা ছিলেন মেধা পাটকর, অরুণা রায়-সহ প্রমুখ সুপরিচিত সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, এই ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয় নিয়ে গোড়া থেকেই এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত আছেন যোগেন্দ্র যাদব। তাঁর মূল্যবান পরামর্শ রাহুল গান্ধিকে সঠিক দিশায় চালিত করতে সাহায্য করছে। জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আগামী দিনের জন্য এটি অত্যন্ত ইতিবাচক এক ঘটনা। এই যাত্রা নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের মরা গাঙে বান ডাকাবে। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে রাহুল গান্ধি ফিরে পাবেন আত্মবিশ্বাস, কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা দীর্ঘকালীন হতাশা কাটিয়ে আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত ও হতাশ কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ যাত্রারূপী লড়াইয়ের আগুনে পুড়ে ইস্পাত দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করবে। স্বাধীনতাপূর্ব কালে যে সংগ্রামী চেহারা ছিল কংগ্রেসের, তা হয়তো খানিকটা হলেও আবার ফিরে আসবে। মানুষের ভরসাও হয়তো ফিরবে।

এর সাথেই অনিবার্যভাবে একটি প্রশ্ন আসবে যে, কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধি কি সত্যিই দেশের কোন উপকারে আসবে? এর উত্তরে বলতে হয় – সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা তো বটেই। কারণ, এই মুহূর্তে দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার্থে মোদি তথা বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। এবং সেটি করতে গেলে সমস্ত বিরোধী পক্ষকে একটা জায়গায় আসতেই হবে। কিন্তু বাস্তবে সবাইকে নিয়ে সার্বিক ঐক্য গড়ে তোলা এই মুহূর্তে বেশ কঠিন। যাত্রা সফল হলে আশা করা যায়, পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূল হবে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে দুশোর ওপর আসনে বিজেপি তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে সরাসরি লড়াইয়ে সম্পূর্ণ পরাভূত করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছে। যাত্রার মাধ্যমে কংগ্রেস শক্তিশালী হলে ও বিজেপিকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ফেলতে পারলে জাতীয় রাজনীতির চালচিত্রই বদলে যাবে।

সবাইকে বুঝতে হবে, বিরোধী ঐক্যকে সংহত করতে হলে এবং বিকল্প সরকারকে সদর্থক দিশায় পরিচালিত করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি শক্ত খুঁটির। এই যাত্রা সফলভাবে শেষ হলে কংগ্রেস দল সেই কাঙ্খিত খুঁটিরূপে আবির্ভূত হবে। অতঃপর সেই খুঁটিকে ঘিরেই গড়ে উঠবে এক শক্তপোক্ত বিরোধী শিবির। সেই কারণেই নিছক কংগ্রেসের স্বার্থে নয়, জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে এবং সময়ের ডাকে সমস্ত সামাজিক সংগঠনগুলি এই যাত্রাকে সহযোগিতা ও সমর্থন করতে সম্মত হয়েছে। এরই পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তে শুরু হতে চলেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ছোট ছোট যাত্রা আঞ্চলিক স্তরে। এভাবেই দেশজুড়ে বিভিন্ন দেশোদ্ধার যাত্রার মাধ্যমে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই সফল হবে। দেশব্যাপী জনজাগরণের ফলে ২৪-এর নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানানো যাবে মোদি-শাহ’র ক্ষমতা তথা বিজেপি শাসনকে সফলভাবে।.

এই দায়িত্ব পালনে যোগেন্দ্র যাদব সফল হলে, তিনি আবার ফিরে এসে কৃষক আন্দোলনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন, লড়াই শুরু করবেন নব-উদ্যমে কৃষকরাজ প্রতিষ্ঠার।

কল্যাণ সেনগুপ্ত

রাজ্য সহ সভাপতি, জয় কিষাণ আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *