জয় কিষাণ: ২৫ নভেম্বর ২০২২

জয় কিষাণ ডেস্ক
লিখেছেন জয় কিষাণ ডেস্ক পড়ার সময় 9

২৬ নভেম্বর সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার রাজভবন অভিযান

কলকাতা, ২৪ নভেম্বর ২০২২: সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকে ২৬ নভেম্বর সারা দেশের সব রাজ্যে ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ২৬ নভেম্বর কলকাতায়:

১) ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির পালন করা হবে এবং রাজ্যপাল মারফত দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে কৃষকদের দাবির স্মারকলিপি জমা দেওয়া হবে।
২) হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দুপুর ১টায় মহামিছিল হবে।
৩) দুপুর ২টো থেকে রানি রাসমণি রোডে বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আজ কলকাতা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখার আয়োজিত একটি সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির নেতৃবর্গ। এই সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, একগুচ্ছ দাবিকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানের জন্যেই এই ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচি।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে এদিন জানানো হয়, এমএসপি আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ বিল-২০২০ বাতিল, শহিদ কৃষকদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার-সহ দেশের কৃষিজীবী মানুষের একগুচ্ছ দাবি পূরণের বিষয়ে দেশের মোদি সরকার লিখিতভাবে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চাকে লিখিত আশ্বাস দেওয়ার ১১ মাসের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও কথা রাখেনি ইউনিয়ন সরকার। ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বকেয়া দাবিগুলো অবিলম্বে পূরণ করার বিষয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করবে। পাশাপাশি সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে ইতিপূর্বেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এমএসপি আইনের বিষয়ে যে খসড়া বিল পেশ করেছিল তা যাতে বিধানসভায় পেশ করে এই সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়িত করা হয়, সেই ব্যাপারেও রাজ্যপালের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবি জানানো হবে। এছাড়াও সার ও বীজে কালোবাজারি এবং ট্যাগিং বন্ধ করার মতো আরও বেশ কিছু দাবি আছে মোর্চার।

যেসব দাবিতে এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হল, ১। সমস্ত ফসলের জন্য সব কৃষককে সি-২ প্লাস ৫০ শতাংশ হারে ন্যূন্যতম সহায়ক মূল্য প্রদানের বিষয়টি আইনিভাবে নিশ্চিত করতে হবে ২। ঋণগ্রস্ত কৃষককে দেনার বোঝা থেকে মুক্তি দিতে ঋণ মকুব প্রকল্প চালু করতে হবে ৩। নয়া বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২০ প্রত্যাহার ও কৃষিক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে ৪। লখিমপুর খেরিতে কৃষক ও সাংবাদিক হত্যায় অভিযুক্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে মন্ত্রীত্ব থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা ৫। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতির জন্য কৃষকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যাপক ফসল বিমা প্রকল্প কার্যকর করা ৬। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের কৃষক এবং কৃষিমজুরদের জন্য মাসিক ৫ হাজার টাকার পেনশন চালু করা ৭। কৃষক আন্দোলনের সময় চাষিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ৮। কৃষক আন্দোলনে শহিদ কৃষকদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ। ৯। মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে। ১০। কেন্দ্র-রাজ্য বুঝি না, ১০০ দিনের প্রকল্প কাজ চাই—বকেয়া মজুরি চাই। ২০০ দিনের কাজ, ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। ১১। সমস্ত গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারি দরে সমস্ত ফসল কিনতে হবে। ১২। ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল সরবরাহ করতে হবে। কালোবাজারি ও ট্যাগিং বন্ধ করতে হবে। ১৩। বনাধিকার ও গ্রামসভার অধিকার খর্বকারী, আদিবাসী-বিরোধী, প্রকৃতি-পরিবেশ বিরোধী নয়া বনসংরক্ষণ আইন ২০২২ বাতিল করতে হবে। ১৪। ভূমি দফতরে ঘুষ-দালালি বন্ধ করতে হবে। ১৫। বাস্তুহীনদের পাট্টা দিতে হবে। খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার রাজ্য নেতৃবর্গ এদিন সাফ জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য— এই উভয় সরকার অবিলম্বে দাবিগুলো পূরণ না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা, পশ্চিমবঙ্গ-এর তরফে সাংবাদিক বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২, দুপুর ১টা থেকে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা মহামিছিল করে রানি রাসমণি রোডে সমবেত হবেন। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সভা। তারপর মোর্চার তরফে রাজভবনে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কৃষকদের সংগ্রামকে অব্যাহত সমর্থন এবং সংহতির জন্য সকল গণ-সংগঠনকে ২৬ নভেম্বর ২০২২-এ ‘রাজভবন চলো’ অভিযান-সহ চলমান সংগ্রামগুলিকে এগিয়ে আসার এবং সমর্থন করার জন্য আবেদন করে।

মোর্চার তরফে এদিন জানানো হয়, দেশব্যাপী ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচি আন্দোলনের পরবর্তী পর্বের সূচনা করতে চলেছে। এসকেএম সারাদেশের কৃষকদেরকে ‘ঋণমুক্তি-পুরো দাম’ ও ‘ঋণ থেকে মুক্তি এবং সম্পূর্ণ পারিশ্রমিকের মূল্য’ বিষয়গুলো সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত পূরণ না করবে, ততদিন দেশব্যাপী ব্যাপক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে চলেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। উল্লেখ্য, নয়া-উদার অর্থনীতির জেরেই দেশের কৃষি সঙ্কট যেমন বেড়ে চলেছে, ঠিক সেভাবেই আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ভারতে ৪ লাখেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করে মারা গেছেন এবং প্রায় ৬৮ শতাংশ কৃষক পরিবার ঋণ ও আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাজভবন অভিযান কর্মসূচির পরে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকসভা এবং রাজ্যসভা সাংসদের অফিসে এবং সমস্ত রাজ্যের বিধায়কদের কাছে মিছিল করা যাওয়া হবে ও তাঁদের সকলের কাছে কল-টু-অ্যাকশন চিঠি জমা দেওয়া হবে; দাবি করা হবে যে তাঁরা সংসদ/রাজ্য বিধানসভাগুলিতে কৃষকদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরবেন এবং এই সমস্যাগুলির বিতর্ক এবং সমাধান করতে বাধ্য করবেন।

এছাড়াও এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পরিবেশ, প্রকৃতি এবং মানুষ ও গবাদি পশুর জীবনের উপর পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই একচেটিয়া কর্পোরেট মুনাফা অর্জনের সুবিধার্থে জিএম-বীজ প্রসঙ্গে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের ভূমিকার নিন্দা করে।

এই সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অভীক সাহা, অমল হালদার, কার্তিক পাল, সমীর পূততুণ্ড প্রমুখ।

কেরালায় ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহত্যা

ক্রমাগত ফসলের ক্ষতির কারণে বুধবার বাম-শাসিত কেরালার পেরুভাম্বুর কাছে কারুকামানিতে একজন ধান চাষি আত্মহত্যা করেছেন। মৃত কৃষকের নাম মুরলীধরন (৫২)। তিনি ক্রমাগত ফসল নষ্টের ফলে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। মৃতদেহ বুধবার সকালে তাঁর নিজের বাড়ির কাছে একটি অব্যবহৃত বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর লেখা দুটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মুরলীধরন তার ভাই গোপালনের সাথে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে থাকতেন।পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে ক্রমাগত ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে তিনি ধার করে চাষ শুরু করেন। কিন্তু ফসল নষ্ট হওয়ায় তিনি এই পরিণতি বেছে নেন । ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তাঁর অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।  

সূত্র- দ্য হিন্দু

বিজেপি শাসিত চার রাজ্যে ক্ষেতমজুরদের মজুরি সবচেয়ে কম, আরবিআই রিপোর্ট ঘিরে চাঞ্চল্য

প্রধানমন্ত্রীর ‘রোজগার মেলা’ কে ডবল ইঞ্জিন সরকারের সাফল্য বলার একদিন পরেই আরবিআই-এর রিপোর্ট ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল। রিপোর্টে প্রকাশ, কৃষক/ ক্ষেতমজুরের দৈনিক মজুরি সবচেয়ে কম উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, ত্রিপুরায়। উল্লেখ্য, এই চারটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত রাজ্য। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, যখন মধ্যপ্রদেশে পুরুষ কৃষক/ ক্ষেত মজুরদের দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ২১৭ টাকা, গুজরাতে তখন তাঁরা ২০২২ সালের মার্চ মাসের শেষে ২২০ টাকা দৈনিক মজুরি পান। ত্রিপুরা এবং উত্তরপ্রদেশে, কৃষক/ক্ষেতমজুরেরা যথাক্রমে ২৭০ টাকা এবং ২৮৮ টাকা মজুরি পেয়েছেন।

মোদি সরকারের কর্পোরেট পুঁজির কাছে নতিস্বীকার করেছে, ফলত তাদের কৃষকদের কথা ভাবার সময় নেই, এমনটাই মনে করছেন কৃষক/ক্ষেতমজুরেরা।অন্যদিকে, আরবিআই-এর তথ্য দেখায় যে কেরালা রাজ্যগুলির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যারা সর্বোচ্চ মজুরি দেয়। এলডিএফ-শাসিত রাজ্যটি দেশের গ্রামীণ এলাকায় কৃষক/ক্ষেত মজুরদের সর্বোচ্চ মজুরি প্রদান করে, তারপরে জম্মু-কাশ্মীর এবং তামিলনাড়ু। আরবিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কেরালায় একজন ক্ষেতমজুর দৈনিক ৭২৬ টাকা মজুরি পেয়েছিলেন যা জাতীয় গড় ৩২৩ টাকার চেয়ে বেশি।

সূত্র- ন্যাশনাল হেরাল্ড

বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধির সারে ভর্তুকির প্রস্তাব কৃষক সংগঠনগুলির

মঙ্গলবার কৃষক সংগঠনগুলি সারে ভর্তুকির জন্য সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি (পিএম-কিষাণ) এর অধীনে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং যেখানে জমির খরচ কম সেখানে কৃষি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার নীতি-সহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছে।

বুধবার ভারতীয় কিষাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক মোহিনীমোহন সিং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরে বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রধানমন্ত্রী কৃষি যোজনার অধীনে কৃষকদের দেওয়া আর্থিক সহায়তা বাড়ানো উচিত”। সিং আরও বলেন যে কোনও বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল কৃষকদের সার ভর্তুকি-সহ সহায়তা হস্তান্তরের ডিবিটি পদ্ধতি গ্রহণ করা।

সূত্র- ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস

বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আরও খবর

অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রণয়নের পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

১৫ তারিখের মধ্যে হিমঘর খালি করলে তবেই ভাড়ার ওপর মিলবে ছাড়, ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে যদি হিমঘর থেকে আলু না সরানো হয় তাহলে পুরো মাসের ভাড়াই দিতে হবে তাঁদের। রাজনৈতিক মহলের মতামত অনুযায়ী জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন প্রণয়নের পথে হাঁটছেন। জানা গেছে তিনি খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রক কমিটির সদস্যদের কাছে বাজারে আলুর দাম কুড়ি টাকা কিলোগ্রামের নিচে রাখার প্রস্তাব রেখেছেন।

সূত্র- আনন্দবাজার

বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ট্যাগ করা হয়েছে:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *