কৃষক আন্দোলনের রাজনৈতিক দিশা নির্ধারণ করা প্রয়োজন: যোগেন্দ্র যাদব

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সময় নেতৃত্বের মুখ হিসেবে আরও অনেক কৃষক নেতার সঙ্গে উঠে এসেছিলেন যোগেন্দ্র যাদব। কৃষক আন্দোলনের সাফল্যের সঙ্গে জুড়ে আছে তাঁর নাম। বিজেপির জন-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তিনি সবসময় প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল মুখ । কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকদের ব্যাপারে উদাসীনতা তাঁকে আবার মুখ খুলতে বাধ্য করল। তিনি সম্প্রতি কৃষকদের সমস্যা নিয়ে মোদি সরকারকে তুলোধোনা করেন।
‘কিষাণ সম্মান নিধি’র বাস্তবতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও সম্প্রতি সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ১৯ নভেম্বর সারা দেশে ‘ফতেহ দিবস’ উদযাপন এবং কিষাণ আন্দোলনের আসন্ন কর্মসূচি ঘোষণা তাঁকে কৃষক আন্দোলন নিয়ে আশাবাদী করেছে। চলতি সপ্তাহে তথ্যের অধিকার জানা আইনের মামলায় জানা যায় গত লোকসভা নির্বাচনের আগে অনেক ধুমধাম করে চালু করা কিষান সম্মান নিধি যোজনার সুবিধাভোগীর সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে । ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, লোকসভা নির্বাচনের আগে, এই প্রকল্পের প্রাথমিক কিস্তিতে ১১.৮৪ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়। সরকার বলেছিল যে এই প্রকল্পের আওতায় ১৪ কোটি কৃষক পরিবারকে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু চলতি বছর ১১ তম কিস্তি আসার সময়, সুবিধাভোগীর সংখ্যা মাত্র ৩.৮৭ কোটিতে নেমে আসে।
‘দ্য হিন্দু’ সরকারকে তার কারণ প্রকাশ করতে বললেও, সরকার সাড়া দেয়নি। কিন্তু এই রিপোর্ট প্রকাশ নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর, সরকার কিছু ভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এবং সমস্ত দোষ রাজ্য সরকারগুলির উপর চাপানো হয়েছে। এখানে প্রশ্ন জাগে, এই পরিসংখ্যান ভুল হলে সরকার নিজেই তথ্যের অধিকার মামলা আইন কেন শুরু করেছে। সরকার নির্দেশ করছে যে এই পরিসংখ্যানগুলি কেবলমাত্র সেই কৃষকদের জন্য যারা ধারাবাহিকভাবে সমস্ত কিস্তি পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও, এটি প্রকল্পটির একটি গুরুতর ব্যর্থতা দেখায়। এমনকি রাজ্য সরকারগুলির দোষ থাকলেও, প্রধানমন্ত্রী এটি থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। কারণ যে রাজ্যগুলিতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে (যেমন মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, বিহার এবং মহারাষ্ট্র) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজেপি শাসিত ছিল।
এ সব থেকে স্পষ্ট যে, এই সরকার কৃষকদের প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে সিরিয়াস নয়, দাবিতেও সত্য নয়, ঘোষণার ব্যাপারেও নিশ্চিত নয়, লিখিত আশ্বাসও রাখে না। স্পষ্টতই, এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের আবার তাদের সংগ্রাম শুরু করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলেও জানান যোগেন্দ্র যাদব।
সূত্র- পাঞ্জাব কেশরী
যোগেন্দ্র যাদবের লেখাটি বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনশন বন্ধ করে কৃষক বিক্ষোভ আরও তীব্র হল পাটিয়ালায়

পাঞ্জাবে কৃষক অসন্তোষ ক্রমেই আরও তীব্র হচ্ছে। রবিবার কৃষক নেতারা ধরেরি জট্টান টোল প্লাজায় আমরণ অনশন শুরু করলেও , বৃহত্তর কৃষক আন্দোলেনের স্বার্থে সোমবার তাঁদের অনশন প্রত্যাহার করেছেন। টোল প্লাজায় আংশিকভাবে পাটিয়ালা-চণ্ডীগড় সড়ক অবরোধকারী কৃষকরা বলেছেন, রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি পূরণ না করলে তারা মঙ্গলবার পুরো রাস্তা অবরোধ করবেন। পাটিয়ালা ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (একতা-সিধুপুর) সভাপতি জোরওয়ার সিং এবং রাজপুরার জগজিৎ সিং রবিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছিলেন।
জোরওয়ার সিং বলেন, বিকেইউ-এর একটি রাজ্যপর্যায়ের দল তাঁদের পরিদর্শন করেছে এবং পরিদর্শনের পর কৃষক নেতারা অনশন প্রত্যাহার করেছেন। কৃষকরা নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ আরও তীব্র করতে পারেন। আন্দোলনকারী একজন কৃষক বলেন, “আমরা গ্রামে মানুষের সঙ্গে দেখা করেছি এবং আমাদের ন্যায্য দাবির জন্য তাঁদের সমর্থন চাইছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার থেকে আমাদের সম্পূর্ণভাবে রাস্তা অবরোধ করতে হতে পারে।”
সূত্র- দ্য ট্রিবিউন
বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পাঞ্জাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে চাষিদের প্রতিরোধ

অনিচ্ছুক কৃষকদের থেকে বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ উঠল পাঞ্জাবে। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (NHAI) তৈরি করা এক্সপ্রেসওয়ে দিল্লি থেকে অমৃতসর ভ্রমণের সময় কমিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় নামিয়ে আনবে এবং জাতীয় রাজধানী এবং কাটরার মধ্যে ভ্রমণের সময় লাগবে মাত্র সাড়ে ছয় ঘণ্টা। কিন্তু এই ‘উন্নয়ন’-এর বলি হবেন কৃষকরা। এর বিরুদ্ধে নিজেদের জমি হারানোর আশঙ্কায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
রোববার ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (একতা উগ্রাহান) এবং সড়ক সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে কৃষকরা জমি অধিগ্রহণের কাজ বন্ধ করে দেন এবং পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় ট্রাক্টর দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারী বিকেইউ (একতা উগ্রাহান) এর আন্দোলনরত কৃষকরা বলেন, জমি অধিগ্রহণের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দিলে তাঁরা নিয়মিত প্রতিবাদের আয়োজন করবেন। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, একজন কৃষক কর্মী বলেন, “জমির মালিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাকে এই অঞ্চলের কৃষকদের এক ইঞ্চি জমিও কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দেব না।”
কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করে ছাপার এবং ধুলকোট গ্রামে তাঁদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। তার ফলে লুধিয়ানার (পশ্চিম) মহকুমা শাসক স্বাতী টিওয়ানার নির্দেশে আধিকারিকরা জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। আন্দোলনরত কৃষকরা বলেন তাঁদের দাবি মানা না হলে তাঁরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের রাস্তায় হাঁটবেন।
সূত্র- স্বরাজ্য
বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
২৬ নভেম্বর রাজভবন অভিযানে সকল গণসংগঠনকে যোগদানের আহ্বান সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার

২৬ নভেম্বর ‘রাজভবন চলো’ অভিযান কর্মসূচিকে সমর্থন জানানোর জন্যে বিভিন্ন গণসংগঠনকে দাবি জানাল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। গণসংগঠসমূহের প্রতি মোর্চার বক্তব্য, “রাজভবন চলো কর্মসূচিকে সমর্থনের পাশাপাশি কৃষক আন্দোলনকে সংহতি জানানোর ব্যাপারে আমরা ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পশ্চিমবঙ্গ’র তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ ও গণসংগঠনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এই মর্মে আপনাদের গণসংঠন/আপনার কাছেও এই আবেদন জানাচ্ছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পশ্চিমবঙ্গ।”
গণসংগঠনগুলোকে উদ্দেশ্য করে এক বার্তায় মোর্চার রাজ্য নেতৃত্ব বলেছেন, “মনে রাখা দরকার, কৃষক আন্দোলন কৃষক-কৃষিমজুর ও শ্রমিকের হক প্রতিষ্ঠার স্লোগানকে সামনে আনার পাশাপাশি ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখারও শপথ নিয়েছিল। আর তাই কৃষিজীবী মানুষের দাবিদাওয়া সম্পূর্ণভাবে আদায় করার সংগ্রাম আসলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়, বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজবাদী কাঠামোকে রক্ষা করার এক বৃহত্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রামেরই অংশ।” আর বক্তব্যকে সামনে রেখেই আগামী ২৬ নভেম্বর সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকে ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচিকে সমর্থন করার ব্যাপারে গণসংগঠনগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
বিভিন্ন অংশের গণসংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে কৃষক আন্দোলনকে এক বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেহারা দিতে চাইছে এই সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। আর তাই এই ব্যাপারে তাদের সাফ বক্তব্য, “অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বহু মত ও পথের যৌথ সংগ্রামের দ্বারাই কিষাণ-কৃষিমজুর-শ্রমিক-ছাত্র-যুব-মহিলা-সংখ্যালঘু-দলিত-সহ সকল ভারতবাসীর স্বর্ণালী এক আগামী নির্মাণের বৃহত্তর সংগ্রামের হদিশ দেবে কৃষক আন্দোলনের পাশাপাশি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলন, যার দ্বারা আমরা আবার ফ্যাসিবাদ মুক্ত এক বহুত্ববাদী, গণতান্ত্রিক, সমন্বয়বাদী কৃষিনিবিড় ভারত গঠন করতে পারব।”
‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির ব্যাপক প্রচার মহানগরে

কলকাতা, ২২ নভেম্বর ২০২২: কৃষকদের বকেয়া দাবিদাওয়া পূরণের ব্যাপারে আগামী ২৬ নভেম্বর গোটা দেশের সবকটি রাজ্যে যে ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, মঙ্গলবার ‘সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির তরফে তার প্রচার চলল কলকাতা মহানগরীতে। কেন্দ্র ও রাজ্য— এই উভয় সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ও স্থানীয় ক্ষেত্রে কৃষকদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে এদিন ধর্মতলা ডেকার্স লেন, নিউ মার্কেট, হাজরা মোড়, একাডেমি অব ফাইন আর্টস, রাসবিহারী-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার চালানো হয়।
কৃষিজীবী মানুষের রাজভবন অভিযানের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অবগত করা হয় এই প্রচার থেকে। এমএসপি আইন প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ বিল-২০২০ বাতিল, কৃষিবিমা ও কৃষকদের পেনশন চালু করার মতো দাবিগুলোর ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। বিলি করা হয় প্রচারপত্র। এদিন এই প্রচার কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন প্রবীণ কৃষক নেতা কল্যাণ সেনগুপ্ত ও কার্তিক পাল। এছাড়াও সুফিয়া খাতুন, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী, ইন্দ্রানী দত্ত প্রমুখ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিরা শামিল হয়েছিলেন প্রচার কর্মসূচিতে।
কৃষকের থেকে লুট: ২১ নভেম্বর ২০২২
