শুধুই কেন্দ্র নয়, রাজ্যের কাছেও হিসেব চাইছে কৃষিজীবী জনতা

জয় কিষাণ ডেস্ক
লিখেছেন জয় কিষাণ ডেস্ক পড়ার সময় 5

শুধু কেন্দ্রের মোদি-শাহ সরকার নয়, রাজ্য সরকারের প্রতিও হাজারও দাবিতে সরব রাজ্যের কৃষক ও ক্ষেতমজুররা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবির পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছেও এক গুচ্ছ দাবি পেশ করা, আজকের রাজভবন অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য।

মোর্চার সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার তরফে এমএসপি আইনের যে খসড়া রাজ্য সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছিল, সেই খসড়াটির বিষয়ে কোনোরকম উচ্চবাচ্য করেনি রাজ্য সরকার। এমনকি সেই খসড়াটির প্রাপ্তিস্বীকারের সৌজন্যটুকুও দেখানো হয়নি। মোর্চার দাবি, ওই খসড়া আইনের ভিত্তিতে অবিলম্বে রাজ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) আইন প্রণয়ন করতে হবে রাজ্য সরকারকে।

এ রাজ্যে আলু পাট প্রভৃতি ফসল সঠিক সরকারি দরে গ্রামে ক্যাম্প করে চাষিদের থেকে কেনার দাবিও তুলতে চলেছে মোর্চা। তাদের দাবি, স্বল্প খরচে ফসল সংরক্ষণের জন্য ব্লকে/পঞ্চায়েতে বহুমুখী হিমঘর তৈরি করতে হবে। সেগুলির নিয়ন্ত্রণে কৃষকের তদারকি চালু করতে হবে।

জানা গেছে, রাজ্যে একশো দিনের কাজের বকেয়ার ব্যাপারেও সোচ্চার হতে চলেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার রাজ্য শাখা। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্র-রাজ্য বুঝি না, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ চাই — বকেয়া মজুরি চাই। একশো দিনের কাজ বৃদ্ধি করে দুশো দিনের কাজ এবং ৬০০ টাকা মজুরির দাবিও তুলছে মোর্চা।

মোর্চা সূত্রে খবর ভর্তুকি দিয়ে ডিজেল সরবরাহের দাবিও রাখা হচ্ছে দাবিসনদে। মোর্চার দাবি, এক টাকা ইউনিট দরে কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ করতে হবে।

কীটনাশক, সার ও বীজে যে ব্যাপক হারে কালোবাজারি ও ট্যাগিং চলছে এ রাজ্যে, তা যাতে অবিলম্বে বন্ধ হয় এবং নির্ধারিত মূল্যে যাতে কৃষকরা সার ও বীজ সংগ্রহ করতে পারেন, সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ করার ব্যাপারেও রাজ্য সরকারের কাছে মোর্চা দাবি তুলছে বলে জানা গেছে। মোর্চার বক্তব্য, কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার কারণে চাষিরা চরম লোকসানে পড়েছেন। এর ওপর তাঁদের এমআরপির বাইরে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে। বর্তমান চাষের মরসুমে সারের কালোবাজারি খোলাখুলি প্রশাসনের চোখের সামনে ঘটে চলেছে। তাই সংযুক্ত মোর্চার রাজ্য কমিটির দাবি, সার, বীজ, কীটনাশক প্রভৃতি কৃষি উপকরণ ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্য দামে গরিব ও মধ্য চাষিদের সরবরাহ করতে হবে। সারের কালোবাজারি কঠোরভাবে বন্ধ না হলে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে মোর্চ।

এছাড়াও আর একগুচ্ছ দাবি থাকছে স্মারকলিপিতে। যেমন-

ক। এ রাজ্যের সরকারি বীজখামারগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া চলবে না। অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে দেশীয় বৈচিত্রমূলক বীজ তৈরি, সংরক্ষণ ও প্রয়োজন অনুসারে সরবরাহ করতে হবে। নিম্নমানের সার আমদানি বন্ধ করো, ভর্তুকি দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষকদের সার দিতে হবে। জৈব সার তৈরি ও ব্যবহারে সরকারি সহায়তা করতে হবে।

খ। বাস্তুহীনদের পাট্টা দিতে হবে। খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। আদিবাসীদের বনের জমির পাট্টা পরচা দিতে হবে, কোনোরকমভাবেই উচ্ছেদ করা চলবে না। পাট্টা পেলেও পরচা হয়নি বা পরচা পেলেও জমির চরিত্রে জঙ্গল লেখা থাকার দরুণ সরকারি সাহায্য বা সরকারি দরে ধান বিক্রি করতে পারছেন না, তাই অবিলম্বে পরচা দিতে হবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ চলবে না।

গ। ভূমি দফতরে ঘুষ-দালালি বন্ধ করতে হবে। বর্গা উচ্ছেদ কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। নতুন বর্গারেকর্ড করার কাজ চালু রাখতে হবে। ব্লক ভূমিদপ্তরে দুর্নীতি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। জমির রেকর্ড, জরিপ ও নানাবিধ বিবাদ মীমাংসার কাজে দীর্ঘসূত্রিতা, দালালরাজ বন্ধ করতে হবে।

ঘ। চা শ্রমিকদের বাস্তুজমির পাট্টা দিতে হবে। উত্তরবঙ্গের চাষের জমির রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে নদীগুলোর সংস্কার করতে হবে। তিস্তা সেচ প্রকল্পকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রূপায়িত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সেচ প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে।

ঙ। ফল, ফুল-সহ নানাবিধ বাগিচা চাষে সরকারকে উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে। বিশেষত এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, মধ্য চাষিদের পুঁজি ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। রেশম চাষ, তাঁত শিল্পের পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারকে বিশেষ পরিকল্পনা নিতে হবে। মৎস্যচাষিদের কেবল কার্ড দিলেই চলবে না, এঁদের জন্য ব্যাংক ও সমবায়ের ঋণ সহায়তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

চ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মৌজাভিত্তিক নয়, চাষিদের জোতভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, মালদহ-মুর্শিদাবাদে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সুন্দরবন বাঁচাও প্রকল্প অবিলম্বে কার্যকরী করতে হবে।

ছ। মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির জুলুমবাজি বন্ধ করতে হবে।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার বক্তব্য, রাজ্যে এমএসপি আইন প্রণয়ন না হলে, সারের কালোবাজারি বন্ধ না হলে এবং অন্যন্য দাবিগুলো রাজ্য সরকারের তরফে না মেনে নেওয়া হলে রাজ্যে ব্যাপক ও বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়া ব্যতীত কৃষকদের কাছে আরও অন্য কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না।

ট্যাগ করা হয়েছে:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *