এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে: জয় কিষাণ

জয় কিষাণ ডেস্ক
লিখেছেন জয় কিষাণ ডেস্ক পড়ার সময় 7


“বেয়নেট হোক যত ধারালো—
কাস্তেটা ধার দিয়ো, বন্ধু!
শেল আর বম হোক ভারালো
কাস্তেটা শান দিয়ো, বন্ধু।”

শস্য আর কাস্তের শপথ নিয়ে কৃষকদের রাজভবন অভিযান কর্মসূচি উপলক্ষ্যে পাঞ্জাবে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার জনসভা কার্যত জনজোয়ারে পরিণত হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গ

“নতুন চাঁদের বাঁকা ফালিটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে ?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ-যুগের চাঁদ হ’ল কাস্তে!”

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখার মিছিলের একটি সূচনাপ্রান্ত ছিল শিয়ালদহ স্টেশন। শিয়ালদহ থেকে মিছিলের নেতৃত্ব দিলেন মোর্চার রাজ্য নেতৃবর্গ।

পশ্চিমবঙ্গ

“পঞ্চাশে লাখ প্রাণ দিছি
মা-বোনেদের মান দিছি
কালোবাজার আলো করো তুমিই না?
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেব না আর দেব না
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো।”

কিষাণদের মহামিছিলে কলকাতায় ছাত্র-যুবদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।


উত্তরপ্রদেশ

“মোরা তুলব না ধান পরের গোলায়
মরব না আর ক্ষুধার জ্বালায় মরব না
ধার জমিতে লাঙ্গল চালাই
ঢের সয়েছি আর তো মোরা সইব না
এই লাঙ্গল ধরা কড়া হাতের শপথ তুলে নাও
জান কবুল আর মান কবুল”

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতৃবর্গের বড় অংশের উপস্থিতি ছিল উত্তরপ্রদেশে। কিষাণ-ক্ষেতমজুর-সহ খেটে খাওয়া মানুষের হক আদায়ের লক্ষ্যে তাঁরা শপথ নিলেন। এখানেই উপস্থিত ছিলেন রাকেশ টিকায়েত ও হান্নান মোল্লা।

রাজস্থান

“যত বিপ্লব বিদ্রোহের আমি সাথী
আমি মাতি যুদ্ধে হেথায় সেথায়
মানুষের মুক্তির বিপন্নতায়”

রাজস্থানের জয়পুরে রাজভবন অভিযান উপলক্ষ্যে ব্যারিকেডের সামনে চলল সংগ্রামী কৃষক-জনতা বনাম পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি।

পশ্চিমবঙ্গ

“হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই
চলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।।”

আবারও মিছিল নগরী কলকাতায় জনজোয়ার। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার রাজভবন অভিযান কর্মসূচিতে ফের দিনবদলের স্বপ্প বুনতে শুরু করল সংগ্রামের মহানগর।

পশ্চিমবঙ্গ


“কৃষকের সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।”

“কৃষক-জনতার সংগ্রাম চলছে এবং চলবে। যতক্ষণ না কৃষকের স্বরাজ কায়েম হয়, যতক্ষণ না এমএসপি আইন কেন্দ্রে ও রাজ্যে কায়েম হয়, যতক্ষণ না কেন্দ্র ও রাজ্য কৃষকদের দাবিপূরণ করেন”- কলকাতার সভা থেকে বললেন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার জাতীয় সমন্বয় সমিতির সদস্য অভীক সাহা। মোর্চার তরফে রাজ্য সরকারের কাছে এমএসপি আইনের যে খসড়া-প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, সমবেত জনতার সামনে সেটিইও তুলে ধরেন তিনি। তাঁর সাফ বক্তব্য, নেতারা শান্তিকুঞ্জ আর শান্তিনিকেতনে বাস করে শান্তিতে দিনগুজরান করতে চাইছেন, কিন্তু কৃষক-সহ সাধারণ মানুষ শান্তিতে নেই। কৃষক-সহ খেটে খাওয়া মানুষ শান্তিতে থাকতে না পারলে নেতা-মন্ত্রীদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না।

পাঞ্জাব

“হত মানে অপমানে নয়, সুখ-সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে
দাস্যের নির্মোক ছাড়তে
অগণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ
চলবেই চলবেই,
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।”

পাঞ্জাবের আপ সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, এই দুই কৃষক বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রায় এক লাখ কৃষক সংঘবদ্ধভাবে লড়াইয়ের শপথ নিলেন।



পাঞ্জাব

“যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগাল আশা
মৌন মলিনমুখে জাগাল ভাষা
আজ রক্তকমলে গাঁথা মাল্যখানি,
বিজয়লক্ষী দেবে তাঁদেরি গলে”

জীর্ণ জাতির মৌনমলিন মুখে হক আদায়ের স্লোগানকে জাগিয়ে তুলে পাঞ্জাবের মাটিতে থেকে দেশকে বাঙ্ময় করে তুললেন কৃষক নারীরা। মা-বোনেরা।

পাঞ্জাব

“ভয় কী মরণে, রাখিতে সন্তানে, মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে৷
সাজ রে সন্তান, হিন্দু মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ, না হয় যাইবে প্রাণ৷
লইয়ে কৃপাণ, হও রে আগুয়ান
নিতে হয় মুকুন্দেরে, নিও রে সঙ্গে৷”

হাজারও মাতঙ্গী, হাজারও প্রকৃতিস্বরূপার ঢল নেমেছিল পাঞ্জাবে।

পাঞ্জাব

“প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।”

পাঞ্জাবের বীর কিষাণদের মরণপণ লড়াই থামবে না, যতক্ষণ না এ দেশে কৃষকের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বললেন ওঁরা।

ত্রিপুরা

“কার বাছার জোটেনি দুধ, শুকনো মুখ, তৈরি হও,
ঘরে ঘরে ডাক পাঠাও, তৈরি হও, জোট বাঁধো,
মাঠে কিষাণ, কলে মজুর, নওজোয়ান জোট বাঁধো
এই মিছিল সব হারার, সব পাওয়ার এই মিছিল।।”

ত্রিপুরবঙ্গ ফের লালে লাল। সবুজে সবুজ। শস্যের কসম খেয়ে আগরতলার রাজপথ কাঁপালেন কৃষক-জনতা।

ত্রিপুরা

“অবহেলে থাকলে বসে, কাঁদতে হবে সারা জীবন
যুগ যুগান্তের তপস্যাতে এসেছে এই লগন,
পারের মাঝি হাল ধরেছে, মিছেই পরের মুখ তাকাও৷
পারের মাঝি হাল ধরেছে, মিছেই পরের মুখ তাকাও৷
বান এসেছে মরা গাঙে খুলতে হবে নাও”

একইসঙ্গে ত্রিপুরায় এবং গোটা ভারতে কৃষক-মজদুর বিরোধী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের হাল ধরার শপথ নিলেন ওঁরা।

মহারাষ্ট্র

মহারাষ্ট্রে কৃষকের সংগ্রামী জমায়েত দেখে মনে পড়ল সেই দৃপ্ত বয়ান-

“আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয়ের বিষাণ
বিদ্যুৎ-গতি হোক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল।”

মধ্যপ্রদেশ

“দেশের মাটিতে আমরা ফলাব
ফসলের কাঁচা সোনা
চিরদিন তুমি নিয়ে যাবে কেড়ে
হায় রে উন্মাদনা!”

মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এসকেএম-এর জমায়েত শাসকের চোখে চোখে রেখে হুঁশিয়ারি দিল, “তোমরা যদি এখনও ভ্রমে থাকো, ক্ষমতার উন্মাদনায় মত্ত থাকো, তোমাদের পরিণতি করুণ হবে অতিশীঘ্রই।”

বিহার

“চিনি তোমায় চিনি গো, জানি তোমায় জানি গো
সাদা হাতির কালা মাহুত তুমি না
জান কবুল আর মান কবুল, আর দেব না
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো”

বিহার আস্তে আস্তে বিজেপিমুক্ত হতে চলেছে। তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি বিহারের হাজার হাজার কৃষকের হুঁশিয়ারি, “তোমাদের আমরা চিনি। আমাদেরকেও এবার তোমরা চিনবে। যদি-না আমাদের দেওয়া সকল প্রতিশ্রুতি তোমরা পূরণ করো।”

ঝাড়খণ্ড

“মেরেছি অনেক হাতি, বাঘ-ভালুক আর বন-শুয়ার
ইবার মারবো শালা ক্ষেতি লুটা জমিন্দার
লড়াই হাঁকে হাঁকে গো লড়াই হাঁকে
দ্রিদাম দ্রিদাম বাজিছে মাদল”

এভাবেই জোর লড়াইয়ের ডাক উঠলো ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে মোর্চার কর্মসূচিকে ঘিরে কৃষক জমায়েত থেকে।

উত্তরপ্রদেশ

লখনৌ-এর রাজপথ দখল করেছিলেন মোর্চার নেতৃত্বে হাজার হাজার কৃষক।

পশ্চিমবঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্পাদক অমল হালদার রাজ্যের তৃণমূল সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে দিলেন চরম হুঁশিয়ারি। এমএসপি আইন প্রণয়ন, কৃষক পেনশন, বিদ্যুৎ বিল বাতিল, সারের কালোবাজারি বন্ধ করার মতো সবকটি দাবিদাওয়া মানা না হলে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করবে, জানালেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ

বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখ, প্রবীণ বাম-গণতান্ত্রিক নেতা সমীর পূততুণ্ড বললেন, রাজ্যে এমএসপি আইন প্রণয়ন না হলে একমাত্র যে পথ খোলা রয়েছে তা হল ব্যাপক আন্দোলন। কেন্দ্রকেও দিলেন হুঁশিয়ারি।

পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতার সভায় অন্যতম বক্তা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত-মজুর সমিতির নেত্রী, বহ গণ-আন্দোলনের মুখ অনুরাধা তলোয়ার। তিনি বললেন, কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যেও আন্দোলন চলবে। যদি না রাজ্য সরকার কৃষকদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়।

পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতার সভায় জয় কিষাণ আন্দোলনের অন্যতম প্রবীণ নেতা রাম বচ্চন ইউনিয়ন সরকার ও রাজ্য সরকারকে নিশানা করলেন। জানালেন কিষাণের হক আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

পশ্চিমবঙ্গ

প্রবীণ সংগ্রামী কমিউনিস্ট কৃষক নেতা কার্তিক পালের বক্তব্যে উঠে এলো জীবন-জীবিকা-রুটি-রুজির প্রসঙ্গ। এবং উচ্ছেদবিরোধী অবস্থানের কথা। কেন্দ্র ও রাজ্য মানুষকে তার ক্ষেত-খামার, জীবন-জীবিকা ও বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করলে চলবে লড়াই, জানালেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ

কলকাতা অবরুদ্ধ হল কৃষিজীবীদের জমায়েতে। শুরু হল নতুন করে স্বপ্ন দেখা।

গোটা দেশের পাশাপাশি এ রাজ্যও দেশের এবং রাজ্যের সরকারকে মনে করিয়ে দিল, “এ যুগের চাঁদ হলো কাস্তে”। সেই একফালি চাঁদ হাতে স্বপ্নের দিন কায়েম করতে পারেন কিষাণরাই। কলকাতার রাজপথ থেকে স্লোগান উঠল, ‘জয় কিষাণ ‘ স্লোগান উঠল ইনকিলাবের।

“ইস্পাতে কামানেতে দুনিয়া
কাল যারা করেছিল পূর্ণ,
কামানে-কামানে ঠোকাঠুকিতে
আজ তারা চূর্ণবিচূর্ণ :
চূর্ণ এ-লৌহের পৃথিবী
তোমাদের রক্ত-সমুদ্রে
গ’লে পরিণত হয় মাটিতে,
মাটির—মাটির যুগ ঊর্ধ্বে!

দিগন্তে মৃত্তিকা ঘনায়ে
আসে ওই! চেয়ে দ্যাখো বন্ধু!
কাস্তেটা রেখেছ কি শানায়ে
এ-মাটির কাস্তেটা, বন্ধু!

ট্যাগ করা হয়েছে:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *