এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কৃষকের দাবিদাওয়াই বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে

জয় কিষাণ ডেস্ক
লিখেছেন জয় কিষাণ ডেস্ক পড়ার সময় 3
ফাইল চিত্র

পঞ্চায়েত ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। যদিও এখনও পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি তবুও বিরোধীরা এখন থেকেই কোমর বেঁধে প্রস্তুত হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য। এবারের পঞ্চায়েত ভোট গুরুত্বপূর্ণ কারণ এবার কৃষকদের দাবিদাওয়াই মূল ইস্যু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। এমনটাই মনে করছে কৃষক সংগঠনগুলো।

দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আগামী ২৬ নভেম্বর গোটা দেশে বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনে অভিযানের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। ইউনিয়ন সরকার কৃষক সংগঠনগুলোর যে সমস্ত দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েও কার্যত কথা রাখেনি, সেইসব দাবিগুলো পূরণ করার মতো দাবির পাশাপাশি লাখিমপুর খেরিতে কৃষক হত্যায় অভিযুক্ত অজয় মিশ্র ও তাঁর ছেলের শাস্তি সুনিশ্চিত করা-সহ একাধিক দাবির ভিত্তিতে এই রাজভবন অভিযান কর্মসূচি। এছাড়াও রাজ্যের স্থানীয় কৃষকদের দাবিদাওয়াগুলোও রাজভবন অভিযানের ইস্যুগুলোর মধ্যে থাকছে এ রাজ্যে সার ও বীজে কালোবাজারি, এমএসপি আইন প্রণয়ন-সহ একাধিক দাবি থাকছে রাজ্য সরকারের প্রতি, যেগুলো রাজভবন অভিযানের দাবিসনদে প্রকাশ পাবে। এই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার পর থেকে বাম ও মধ্যপন্থী কৃষক সংগঠনগুলো যে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক সংক্রান্ত ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে একই সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্র – এই উভয় সরকারে ক্ষমতাসীন শাসক দলগুলোর বিরুদ্ধ্বে প্রচার চালাবে, তা বলাই বাহুল্য।

এ কথা আমরা সকলেই জানি যে সমগ্র দেশে কৃষকদের অবস্থা দিনের পর দিন কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির ফলে ক্রমশ খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হেলদোল নেই। কর্পোরেট পুঁজিকে জায়গা করে দিতে গিয়ে কৃষকদের ক্রমশ কোণঠাসা অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশে কৃষকের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো। দিন দিন পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে। সিএনএন-নিউজ এইটিনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত বছর গোটা দেশে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ জন করে কৃষক এবং ১৫ জন করে খেতমজুর আত্মহত্যা করেছেন! গোটা দেশে যে আত্মহত্যার মোট পরিসংখ্যান, তার সাত শতাংশই কেবল এই কৃষক। ২০১৭ সাল থেকে এ যাবৎ এই পরিসংখ্যানই সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্যও বলছে, ২০২১ সালে দেশে যত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং আত্মহত্যার কথা সামনে এসেছে, তার ৬.৬ শতাংশই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে এতদিন কৃষক আত্মহত্যার খবর সেভাবে শোনা যেত না, কিন্তু ২০২১-২২ সালে এবং চলতি বছরে একের পর এক কৃষকের আত্মহত্যার খবর সামনে আসছে।

রাজ্যে কৃষকের অবস্থা দিন দিন বেহাল হয়ে যাওয়ার কারণে বিরোধীরা এই ইস্যুটিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামনে আনতে চায়। সিপিএম, কংগ্রেস বিজেপি-সহ প্রত্যেকটি বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। কিন্তু বিজেপি যে আলাদা করে কৃষকের স্বার্থে দরদ দেখাতে পারবে না, সেটা আলাদা করে বলার কিছু নেই। কারণ, ইউনিয়ন সরকারের কৃষক বিরোধী নীতিই এর জন্য দায়ী। এ রাজ্যে বিজেপি যদি কৃষক দরদি সাজতে চায়, সেক্ষেত্রে বাম-কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সমস্বরে জনতার কাছে বিজেপির আমলে গোটা দেশে কৃষি ও কৃষকের অবস্থার কথা তুলে ধরে গেরুয়া শিবিরের পর্দা ফাঁই করে দেবে।

এদিকে, রাজ্য সরকার কৃষকদের কথা না ভেবে উৎসব আয়োজনে মেতে আছে এই অভিযোগ বিরোধী দলগুলো অনেকদিন থেকে করে আসছে। সব মিলিয়ে এবার এ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে সবার নজর থাকবে রাজ্যের ক্ষেত-খামারের সঙ্গে যুক্ত ভোটারের দিকে।

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মতামত দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *